সহিদুর রহমান আরাফাত-
একদিন আকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে অদম্য মেঘমালা।
আমি ভ্রুকুটি করি!
স্বাধীনতা মেঘেদের যুক্তির অপঘাতে লাঞ্ছিত হয় প্রতিমুহূর্তে।
কাকে ভালোবাসবো?
মেঘ দিয়েছিল বৃষ্টিময় বৈরী ঝড়ে নিজের অশ্রু ভালোবাসার এক অতৃপ্ত রাত,
তার ভিতরে গচ্ছিত পাপের সন্ধান।
আকাশ সে-তো দিয়েছি আমায় তারার মেলায় চাঁদের খেলায় জোস্নাময় জননীর গল্প,
তার স্বপ্নে সবুজের বুকে জেগে উঠা স্নিগ্ধ সকাল।
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে, কেনো কবিতা লেখো?
আমি বললাম ভিতরে আগুন জ্বলে।
তুমি বললে, কিসের আগুন, আগুনে কি কাব্য হয়?
আমি বললাম, তা হয় কি না জানিনা!
তবে তাকিয়ে দেখো, তাকিয়ে দেখো চারপাশে।
তোমাদের সংগঠন আছে, সংস্থা আছে,
আছে অধিকার আদায়ের মিছিল, মিটিং,
কত শত টকশো, সেমিনার, আদালত আর জনসভা।
যদি তাতেও অধিকার না জোটে তবে ঝাপিয়ে পরো,
যুদ্ধ করো, কামান কিংবা বন্ধুকে বারুদ জ্বালাও,
ক্রোধে ক্ষোভে একে একে হত্যা করো অধিকার হননকারীর শেষ চিহ্ন!
কিন্তু আমার দিকে তাকাও, আমার সমস্ত দেহকে পর্যবেক্ষণ করো,
আমি তো সেমিনার জানিনা, আদালত চিনিনা, যায়নি কোন জনসভায়।
আর গোলা বারুদ অসব তো ছুঁয়েও দেখিনি কোনদিন।
কিন্তু আমারও তো কান্না পায়,
অধিকার আদায়ের তীব্র ক্ষুধায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় সমস্ত শরীর।
আমি যখন বললাম, বন্যায় ভেসে যাওয়া ভিটামাটি,
আর গোয়ালের গরু দুটোয় ছিল আমার শেষ সম্বল।
আমি যখন বললাম, ফার্মগেটের অভার ব্রীজের ফুটপাত আমার একমাত্র বাসস্থান।
আমি যখন বললাম, পুড়ে যাওয়া ঐ বস্তি আমার শেষ আশ্রয় স্থল ছিল।
আমি যখন বললাম, দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া এ সন্তান আমার ডাক্তার হতে চেয়েছিল।
আমি যখন বললাম, সম্ভ্রম হারানো মেয়েটিই ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
আমি যখন বললাম, অচ্ছুৎ বলে সমাজের তিরস্কারে আমার প্রতিটি সন্তান পড়াশোনা ছেড়েছে।
আমি যখন বললাম, বোনের এসিডদগ্ধ দৃশ্য নিরুপায় হয়ে দেখা কলঙ্কিত একমাত্র ছোট ভাই আমি।
আমি যখন বললাম, স্বামীর অত্যাচারে আত্মহত্যা করা মেয়েটির অপয়া বাবা আমি।
আমি যখন বললাম, করোনা যুদ্ধে ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পাওয়া বাবার অভাগা ছেলে আমি।
আমি যখন বললাম, সমাজের বুকে চিৎকারবিহীন প্রতিটি শবের অভিশপ্ত কাফন আমি।
সেদিন একটু আশ্রয়, একটু অর্থ, একটু বিচার, একটু সামাজিকতা, একটু চিকিৎসা কেউ দেয়নি আমায়।
সেদিন সেমিনার হয়নি, আদালত বসেনি, অধিকার আদায়ের মিছিল হয়নি।
অধিকারের বদলে আগুন জ্বালিয়ে দিলে,
আমার সমস্ত শরীর পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে লাগলো,
আমার সমস্ত অশ্রু শুকিয়ে চোখের ভিতর লাল সূর্য ওস্ত হলো।
যেখানে প্রতিনিয়ত আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে আকাশের স্বাধীনতা হননকারী মেঘের হাজারো যুক্তির।
লেখক- সহকারী শিক্ষক, স্কুল অফ এক্সপেরিয়েনশাল লার্নিং।