ফজলে এলাহী ফুয়াদ-
বিজয় শব্দটাতেই এক মাধুর্য খুঁজে পাই, তবে সে বিজয় যদি হয় নিজেকে ফিরে পাওয়া নিজের মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করা তবে তো আনন্দ বেড়ে যায় হাজার গুন।প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আমাদের মাঝে বিজয় এসেছে,কিন্তু কোভিড১৯ পরিস্থিতি ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে বিজয় দিবস ও বাংলাদেশ নিয়ে কি ভাবছে তরুন প্রজন্ম? দেশের সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করছে আমাদের নোবিপ্রবি প্রতিনিধি ফজলে এলাহী ফুয়াদ
স্বাধীনতার অর্ধশত বছরেও আমরা পরিপূর্ণ স্বাধীন হতে পারি নি! একথা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। বহুবছর পরে এসেও আমি আমার স্বাধীনতা কে খুঁজছি। এখনো মায়েরা নিরাপদ চলাফেরা করতে পারে না। এ দুঃখে দিনাতিপাত করেছি কুড়িটি বছর। বিজয়ের মাসে লাখো শহীদের দেশ এবং অসংখ্য মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়ী ভূমি নিয়ে আমার প্রত্যাশা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষায় পরিণত করা। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের আত্মিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করা। হিংসা, বিদ্বেষ এবং অপ-রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সকল কিছুর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ তা ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই হোক এই বিজয় মাসের অঙ্গীকার।
ছিদ্দিক ফারুক,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ১৩ তম ব্যাচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজয়ের মাসটি বাংলার মানুষদের জন্য গৌরবময় চেতনার অনুভূতি নিয়ে আসে।আমাদের এ প্রজন্ম স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, এরা দেখেনি পাকিস্তানি হানাদারদের সমর্পণ, এরা দেখেনি বিজয়কে কাছ থেকে কিন্তু এরা বিজয়ের আনন্দ হ্রদয়ের মাঝে অনুভব করতে জানে। বিজয় দিবস প্রতিটি বাঙালির জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে, এ দিনটি আমাদের চেতনার সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে মিশে আছে। অন্যান্য বছরে এ দিনটি বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলেও এ বছরটি ভিন্ন। এ বছরে আমরা মহামারী কোভিড-১৯ এর চক্রবুহ্যে আবদ্ধ হয়ে আছি যেন নিস্তার নেই এর থেকে, বিজয়ের আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ একে অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হয়তোবা সম্ভব হবে না বিগত বছরগুলোর মতো করে।তবুও প্রার্থনা করি, সুষ্ঠভাবে বেঁচে থাকুক সকল বাংলার মানুষ, চিরকালই হ্রদয়ে আগলে রাখুক দেশপ্রেমের জাগ্রত অনূভুতি।
মিজানুর রহমান,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ,একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম
আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ও ভালোবাসার দিবসটি হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছি। প্রতিবছর এই দিনটি ঘুরে ঘুরে আমাদের মাঝে হাজির হয়। আমরা নতুন প্রজন্মের তরুণরা বিজয় দেখিনি; কিন্তু আমরা শুনেছি জেনেছি সেই বিজয়ের আত্মকথা। আমাদের সবাইকে বিজয় দিবসের অর্জনকে ধারণ করে নতুনদের কাছে বিজয় দিবসের কথা তুলে ধরতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নির্যাতন-নিষ্পেষিত হওয়ার কথা জানাতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর যে কামানের গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অসংখ্য প্রাণের আত্মদান, অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, তা জানলে শিউরে উঠবে তরুণপ্রাণ। দেশের প্রতি জাগবে তাদের ভালোবাসা।
কামরুন নাহার কেয়া,চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ
রক্ত দিয়ে বিজয় বাঙালি জাতির ইতিহাসের সঙ্গে গাঁথা। ১৯৫২ সালে যে রক্ত দিয়ে বিজয় শুরু করেছিল আমাদের পূর্বপুরুষরা, ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের মাধ্যমে সেই বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন মাতৃভূমি, একটি পতাকা এবং সর্বোপরি একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরাই প্রথম জাতি যারা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি । পৃথিবীর ইতিহাসে আমরাই প্রথম জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। বিজয়ের ৪৯ তম বছরে একটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত এবং ধর্ষণমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশে হবে সত্য, ন্যায় ও নৈতিকতার প্রতীক। একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ সেবার মহান ব্রতে নিয়োজিত হতে হবে।
ওবায়দুর রহমান,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা
ক'দিন বাদেই আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী। ইতিহাসের এমন সুন্দর সন্ধিক্ষণে এবারের বিজয় দিবস আমাদের সামনে প্রতীয়মান। স্বভাবতই এই বিজয় দিবসও নানা ঘটনা প্রবাহে সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
বিজয়ের উনপঞ্চাশ বছর পর দেশের সার্বিক অবস্থা আমাদের সবার সামনেই সমভাবে দৃশ্যমান। পরখ বা বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে আসলে বিজয় আমাদের কতটা সম্ভব হয়েছে। একটি সুখী, সুন্দর,শোষণহীন সমাজ নির্মাণের যে স্বপ্ন নিয়ে একসময় এদেশেরই সূর্য সন্তানরা বুক পেতে দিয়েছিলো ঘাতকের বন্দুকের সামনে,তা আজ অনেকটাই পূরণ হয়েছে। দৃশ্যমান বাংলাদেশের দিকে তাকালেই তা টের পাওয়া যায়। শিক্ষা,স্বাস্থ্য,অর্থনীতি,পররাষ্ট্রনীতি,মানবউন্নয়ন সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তবে এতো সব স্বস্তির মধ্যেও রয়েছে অস্বস্তিকর অনেক দিক। বিজয়ের এমন সুন্দর দিনে প্রত্যাশা করবো দেশ সত্যিকার অর্থে সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকে আরো এগিয়ে যাবে। সব দুঃসময় মুছে জনগন ও সরকারের চেষ্টায় একটি সুন্দর শোষনহীন সমাজ প্রত্যাশা করছি।
মালিহা মেহজাবিন পাপড়ি,নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ,বাংলাদেশ লিবারেশান ওয়ার স্টাডিজ বিভাগ
১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের মানুষের জন্য গৌরব ও সম্মানের একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগে সাধারণের অসাধারণ শৌর্য-ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে একাত্তরের এ দিনে শত্রুমুক্ত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রতিটি বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবোধে উদ্দীপ্ত করে দেশবাসীকে, শাণিত করে অনন্ত দেশপ্রেম। বাঙালির এই জনপদ কখনো মুঘল, কখনো পাঠান, কখনো ব্রিটিশ, কখনো পাঞ্জাব-পাকিস্তানিদের শাসনাধীনে ছিল। কখনো ঔপনিবেশিকতার নিগড় আবার কখনো ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতিতত্ত্বের করাল আগ্রাসন। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ শত্রুমুক্ত করার গৌরব কিন্তু খুব কম জাতিরই আছে। বিশ্বের বুকে এক নতুন ইতিহাস। একাত্তরের মার্চে যার সূচনা, ডিসেম্বরই তার চূড়ান্ত পরিণতি। তাই ডিসেম্বর এলেই অনিন্দিত এক অনুভূতির সন্ধান পাই। ডিসেম্বরে পা দিয়েই অনুভব করি পায়ের নিচে শক্ত মাটির স্পর্শ, লাভ করি অনির্বচনীয় আত্মবিশ্বাস। ফিরে পাই এক অনিন্দ্য সুন্দর আত্মশ্লাঘা।
ইসরাত জাহান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ