ফারুক আহমদ-
“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টিঝড়ে…।”
কবি রজনীকান্ত সেনের স্বাধীনতার সুখ ছড়াটির নায়ক গ্রামবাংলার এই নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। সিলেটেরবিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আগের মতো দেখা মিলছে না চিরচেনা সেই বাবুই পাখির বাসা।
এইতো এক দশক আগেও গ্রাম-বাংলার পথে-প্রান্তরে প্রকৃতির বয়ন শিল্পী বাবুই পাখি ও তার বাসা দেখা যেত। কিন্তু সভ্যতার পরিবর্তন,আরঅপরিকল্পিত গাছ কাটায় পাখির বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় প্রকৃতির নিখুঁত স্থপতি, বাবুই পাখি ও তার বাসা আজ হারিয়ে যাচ্ছে
একসময় গ্রামগঞ্জে তালগাছ, সুপারিগাছ, খেজুরগাছ ও নারিকেল গাছ বেশি দেখা যেত আর এই সব গাছে বাবুই পাখি বসবাস করত,সেইসব গাছেখড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে শৈল্পিক বাসা তৈরি করত যা প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও গাছ থেকেকখনও ছিঁড়ে পরতো না। সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত ও। বাবুই পাখি একটি বাসা তৈরিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। যা দেখেযে কারও কাছে চিন্তার খোরাক হত।ভাবতে ভাবতেই ভাবনায় সময় পুড়িয়ে যেত। বাবুই পাখি দল বেঁধে বসবাস সহ বাসা তৈরি করে।
এছাড়াও এরা দল বেঁধে কিচিরমিচির শব্দ করে ডাকাডাকি করে। তবে এদের মধ্যে পুরুষ বাবুই পাখি বেশ উজ্জ্বল তাতেই বুঝা যায় ওটা পুরুষপাখি।
স্ত্রী বাবুই পাখি ডিম দেয়ার সাথে সাথেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তাপ দেয়ার মধ্যেই বাচ্চা ফোটে। বাচ্চাফোটার কিছু দিন পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন সময় হলো ধান ঘরে উঠার মৌসুম।
বর্তমান সময়ে গ্রামগঞ্জ থেকে দিন দিন বাবুই পাখি ও তার বাসা বিলুপ্তির পথে। এ কারণ হিসেবে বলাই চলে,পরিবেশ বিপর্যয় ওঅসচেতনতার,ঝোপঝাড় উজাড় হওয়া, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার ও বনভূমি কমে যাওয়ার ফলে বাবুই পাখির অস্তিত সংকটাপন্ন।
বিশ্বনাথ উপজেলার চন্দ্রগ্রামের প্রতাব সেনাপতি বলেন, আমাদের গ্রামে তালগাছে বাবুই পাখির বাসা হরহামেশাই চোখে পড়তো কিন্তু কালেরঅবর্তমানে আর মানুষের অসচেতনতায় এই শিল্পী পাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম এই পাখি চেনেও না। সবার উচিত বাবুই পাখির বাসাযেন দুষ্ট ছেলেরা নষ্ট না করে তা লক্ষ্য রাখা এবং পাখির অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা।
বিশ্বনাথ উপজেলার ১নং লামাকাজী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের হাজরাই আতাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়রে সহকারী শিক্ষক মো: গৌছআলী বলেন একসময় সকালের ঘুম ভাঙ্গত পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে কিন্তু এখন আর আগের মত এসব পাখি নেই। আর বাবুই পাখি তো বলতে গেলে দেখাই মিলেনা।
তিনি মনে করেন,হয়তো এক সময় আসবে বাবুই পাখি নামের একটি পাখি যে এত সুন্দর করে বাসা তৈরি করতে পারত তা আগামী প্রজন্মেরবাচ্চারা কোন ভাবেই বুঝতে চাইবেনা।
কারণ তারা তো বই পুস্তক পড়ে বাবুই পাখির নাম জানবে বাস্তবে আদৌ দেখতে পারবে কি না জানা নাই।
বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রকৃতিপ্রেমী লোকজনকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।